বলিউডের দুই কিংবদন্তি দিলীপ কুমার-অমিতাভ বচ্চন তাদের অভিনয় জীবনে মাত্র একটি ছবিতে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। বাবা-ছেলের চরিত্রে ১৯৮২ সালে রমেশ সিপ্পির ‘শক্তি’ ছবিতে মুখোমুখি সওয়াল-জবাব ছিল দুজনের। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ একটি মাত্র ছবি দুই প্রজন্মের দুই কিংবদন্তি অভিনেতার মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের জন্ম দিয়েছিল।
বস্তুত সেই কারণেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দিলীপ কুমারের কাছে অমিতাভ বচ্চন ছিলেন সন্তানসম। বিগ বির চোখে তিনি ছিলেন স্নেহময় পিতা। আর সে কারণে বুধবার ভোরে দিলীপ কুমারের মৃত্যুর খবর পেতেই কার্যত শোকস্তব্ধ বলিউডের ‘শাহেনশাহ’।
শোকবার্তা পাঠিয়েছেন প্রয়াতের স্ত্রী সায়রা বানুকে। টুইটে বিগ-বি লেখেন, ‘এক প্রতিষ্ঠান যেন স্তব্ধ হয়ে গেল!’ ২০১৮-য় সঞ্জয় লীলা বনশালী পরিচালিত ‘ব্ল্যাক’ ছবির ১৩ বছর পূর্তিতে অমিতাভকে একটি চিঠি লিখেছিলেন দিলীপ কুমার।
সেই চিঠি সামনে তুলে ধরেন অমিতাভ লিখেছেন, ‘দিলীপ সাব মনে করতেন, আমি অস্কার পাওয়ার যোগ্য।’ শোকবার্তায় অমিতাভের আরও দাবি, ‘যখনই ভারতীয় ছবির ইতিহাস লেখা হবে, তখনই দুটো বাক্যাংশ দিলীপ কুমারের জন্য আলাদা করে ব্যবহার করা হবে। সেগুলো হলো- দিলীপ কুমারের আগে এবং দিলীপ কুমারের পরে।
দিলীপ কুমার ও সায়রা বানু বছর দশ আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের যদি সন্তান থাকত, তাহলে সে ঠিক দেখতে হতো শাহরুখের মতোই! শাহরুখকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন দিলীপ কুমার। শাহরুখও ছিলেন দিলীপ সাহাবের অন্ধভক্ত। তাই তো যখনই সুযোগ হতো শাহরুখ খোঁজ নিতে পৌঁছে যেতেন দিলীপ সাহাবের বাড়ি।
বুধবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দিলীপ কুমারের প্রয়াণের খবর শুনে অভিনেতার বাড়ি ছুটে যান শাহরুখ। তবে নায়কের কায়দায় নয়, শাহরুখ ঠিক যেন ঘরের ছেলে। পাশে গিয়ে বসলেন সায়রা বানুর। শাহরুখকে সামনে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সায়রা।
কিছুটা হলেও শাহরুখ থমকে গেলেন শোকে। তারপর নিজেকে সামলে ভরসার হাত রাখলেন সায়রার হাতে। পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন। বলিউডের বাদশার চোখে-মুখে তখন প্রিয় নায়ককে হারানোর শোক। তবুও ভেঙে পড়লেন না। শক্ত হাতে সামলে নিলেন সায়রা বানুকে। যাকে মায়ের চোখেই দেখেন শাহরুখ খান।
৯৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জেরে এদিন ভোরে চলে যান দিলীপ কুমার। কিন্তু মৃত্যুর পরেও ফের নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, মহম্মদ ইউসুফ খান কেন হিন্দু নাম নিয়ে দিলীপ কুমার হয়েছিলেন? দুটি কারণ শোনা যায় এ নাম ও পদবি বদলের পেছনে। একটি হয় ভয়। আরেকটি প্রেম। তবে আরও একটি কারণ ছিল বলে মনে করা হয়।
যেটি অবশ্য দিলীপ কুমার কখনও নিজের মুখে স্বীকার করেননি। যদিও তৃতীয় কারণটিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ের আলোচনায়। বলা হয়, হিন্দু দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্যই দেবিকারানীর পরামর্শে এ নামবদল করেছিলেন জন্মসূত্রে পাকিস্তানি।
ভারতে স্বাধীনতার বছর ১৯৪৭ সালে ‘জগনু’ ছবিতে অভিনয়ের পরে দিলীপ কুমারের অভিনয় দাপট চিনতে পারেন সবাই। তবে তার অনেক আগেই ১৯৪৪ সালে প্রথম ছবি। সেই ‘জোয়ার ভাটা’ ছবির প্রযোজক ছিলেন দেবিকা রানি। দেবিকাই নাকি, ইউসুফ খানকে ‘দিলীপ কুমার’ নাম নিতে বলেছিলেন।
তবে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ইউসুফ অভিনয় শুরু করার পরে বাবা যাতে জানতে না পারেন তার জন্য নাম বদলেছিলেন বলেও বলিউডে জনশ্রুতি রয়েছে। একটি সাক্ষাৎকারে দিলীপ কুমারও বলেছিলেন, দেবিকা রানির ইচ্ছার কথা।
নিজের আত্মজীবনী ‘দ্য সাবস্টেন্স অ্যান্ড দ্য শ্যাডো’তে দিলীপ লিখেছেন, ‘তিনি (দেবিকা রানি) বলেছিলেন, আমি ভাবছি তোমার একটা স্ক্রিন নাম হলে ভালো হয়।’ বইতে এমন লিখলেও ১৯৭০ সালে এক সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, বাবার ভয়েই নাম বদল করতে হয়েছিল। কারণ বাবা অভিনয় পেশাকে পছন্দই করতেন না। ‘নৌটঙ্কি’ বলে মনে করতেন। বন্ধু দেওয়ান বসেশ্বরনাথ কপুরের নাতি রাজ কপুরের অভিনয় জগতে আসাটাও মেনে নিতে পারেননি দিলীপের বাবা।